আব্বু, কিছু কথা বলব বলে বেশ কয়েক বারই আপনার কামরা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু বলতে পারিনি! কেন বলতে পারিনি? বলতে না পারার যথেষ্ট কারণ এ সমাজে বিদ্যমান! আব্বু, আপনার এ সন্তান গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চায়। পবিত্র জীবনযাপন করে দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে কল্যাণ লাভ করতে চায়। সে ফিতনার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে চায় না। সে ভুলে যেতে চায় না নিজের মুসলিম পরিচয়। আব্বু, আপনার সন্তানের হৃদয়ের আকুতিটুকু জানতে একটি বার হলেও এ বইটির প্রতিটি বাক্যের ওপর নজর বুলাবেন। আশা করি, আপনার সন্তানের প্রকৃত সফলতার কথা ভেবে তার নেক আগ্রহে সম্মতি প্রকাশ করবেন।
ইতি, আপনার আদরের সন্তান…
বাবা! আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন বইটির ফ্রি পিডিএফ অফিসিয়ালি অনুমোদিত নয়।
বাবা! আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন বইটি পড়ে রিভিউ সেকশনে রিভিউ দিয়ে অপরকে উৎসাহিত করুন।
habibullah –
#_হে_বাবা_আমার_বিয়ের_ব্যবস্থা_করুন_
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন__”আল্লাহ তোমাদেরকে অসিয়ত করছেন, তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে”।[ সূরা, নিসা]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন___ “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, ইমাম (নেতা-শাসক) তার অধীনস্থ জনগণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে। মহিলা হচ্ছেন তার স্বামীর গৃহের কর্তৃত্বকারিণী। তাকেও তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে…”।
কাজেই সন্তান-সন্ততি মা-বাবার প্রতি আল্লাহর এক বিরাট আমানত। এ আমানত সংরক্ষণ করা পিতা-মাতার অতিভ জরুরী। সন্তান-সন্তুতির প্রতি পিতামাতার অধিকারগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা__ব্যক্তিগত অধিকার ও নৈতিক অধিকার।
ব্যক্তিগত অধিকারের আওতায় আছে, যথা__ তাদের সুন্দর একটা নাম রাখা। সন্তান জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ থেকে তাকে বঞ্চিত না করা। হালাল রুজি-রোজগার থেকে শিশুকে প্রতিপালন করা। সাধ্যানুযায়ী তার মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করা। সন্তানদের সবাইকে সমান চোখে দেখা এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য না করা।
নৈতিক অধিকারের আওতায় আছে, বাল্যবয়স থেকেই সন্তানদেরকে সঠিক আদাব ও তারবিয়াত প্রদানের প্রচেষ্টা চালানো পিতামাতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন___ “উত্তম আদাব তারবিয়াত প্রদানের চেয়ে বড় আর কিছু নেই যা মাতা-পিতা সন্তানের জন্য করতে পারে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন___”তোমাদের সন্তানদেরকে সম্মানিত করতে তাদেরকে সুন্দর আদাবসমূহ শিখিযে দাও”। সুন্দর আদাব তারবিয়াতের মাধ্যমেই তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর আশা করা যায়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন___
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও”।[সূরা,তাহরীম]
সন্তান-সন্ততির আদাব তারবিয়াত কেমন হওযা উচিত হযরত লোকমান হাকীম আলাইহিস সালামের সন্তানদের প্রতি দশটি অছিয়ত তার উত্তম নমুনা হিসেবে আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য পবিত্র কুরআনে কারিমে তুলে ধরেছেন। [সূরা, লোকমানের আয়াত১৩-১৯] উপেরোল্লিখিত আয়াতগুলোর সারসংক্ষেপ, সন্তানের তারবিয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলামি জ্ঞানের যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, যথা__ ঈমানী জ্ঞান অর্থাৎ সঠিক ইসলামি আক্বীদা। পিতা-মাতার হক। নামায তথা শরীয়তের আহকামসমূহ এবং মাসায়েল। সৎকাজের আদেশ অসৎকাজের নিষেধ। চারিত্রিক গুণাবলী ইত্যাদি।
সন্তান-সন্ততিকে সঠিক তারবিয়াত প্রদানে লাভ ও না দেয়ার ক্ষতি।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন__ “যারা ঈমানদার হয়েছে এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদেরকে তাদের সন্তানদের সাথে মিলিত করে দেবো। আর তাদের আমলকে (সৎকর্মকে) বিন্দুমাত্রও হ্রাস করবো না”। [সূরা, তুর]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন__ “আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তার সকল আমলের সমাপ্তি ঘটে যায় শুধুমাত্র তিনটি আমল ছাড়া। আর সেগুলো হচ্ছে, যথা__সাদাকায়ে জারিয়া। এমন ইলম যা থেকে লোকেরা ফায়দা পেতে থাকে। নেক সন্তান যে তার জন্য দু’আ করতে থাকে”।
এর বিপরীতে মানুষ তার প্রতি আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সন্তান সন্ততিকে গড়ে তোলার এ আমানতের খেয়ানত করলে কাল কিয়ামতের দিন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। শুধু তাদের দু’আ থেকে বঞ্চিত হওয়া নয় তাদের পথ ভ্রষ্টতার দায়-দায়িত্বের অনেকাংশও এসে পড়বে তার উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন___”একজন মানুষের এতটুকুন গুনাহই যথেষ্ট যে, সে তার উপর নির্ভরশীলদেরকে (সন্তানদেরকে) বরবাদ করে দেয়”।
#_মূল_আলোচনাঃ
সন্তান যখন গুণী, সজ্জন ও চরিত্রবান হয় এবং সব ধরনের ভ্রান্তি ও পদস্খলন থেকে নিরাপদ থাকে, কেবল তখনই সে মাতা-পিতার জন্য পরিপূর্ণ নিয়ামত হিসেবে পরিগণিত হয়। তারপর সন্তানাদি থেকে আসে গোলাব-কুঁড়ির মতো কচি কচি নাতি-নাতনি ___ পরিবারের আসরগুলোকে তারা জমিয়ে তোলে নিষ্পাপ মুখের হাসিতে আর পুরো ঘরজুড়ে জড়িয়ে দেয় মুঠো মুঠো খুশির বিচিত্র সব মণিমুক্তো। এভাবে একটি পরিবার থেকে জন্ম নেয় আরও অনেক পরিবার, বয়ে চলে মানুষের বংশ-পরম্পরা। সন্তানদের দেওয়া মুরুব্বিদের তারবিয়াত ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যায় পরবর্তী বংশধরদের হৃদয়ে হৃদয়ে। উত্তম তারবিয়াতের সাওয়াব ও নিরবধি জমা হতে থাকে পূর্ববর্তীদের আমলনামায়।
সন্তানদের আদর্শচ্যুতি ও চারিত্রিক অধঃপতনের অন্যতম বৃহত্তম কারণ হলো, নানান অজুহাতে তাদের বিয়েকে পিছিয়ে দেওয়া।
মোবাইল ইন্টারনেট।বর্তমানে সহজলভ্য একান্ত আলাপচারিতার এমন আরও কত মাধ্যম! গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার পরিবেশ যেমন বিস্তৃত। উন্মাদনা-উদ্রেককারী সরঞ্জাম ও তেমনই মানুষের হাতের নাগালে। অশ্লীলতা-বেলেল্লাপনা প্রচার-প্রসার পাশ্চাত্যের নোংরা প্রচারণাও বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এমন নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে যুবক-যুবতিদের যে কতটা চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটছে, তা আমাদের কারও অজানা নয়। যে আসক্তির পেছনে পড়ে তারা পাপাচারে হাবুডুবু খাচ্ছে, সে আসক্তি আর কামবাসনা পূরণের সহজ পথ ও বৈধ মাধ্যম হলো বিয়ে। বিয়ের আমল করেই যুবক-যুবতিরা বেঁচে থাকতে পারে চারিত্রিক বহু অবক্ষয় থেকে। কিন্তু বিয়ের মতো আমলটি করতে চাইলেই কি তারা সহজে এ চাওয়া পূর্ণ করতে পারে? বর্তমানে মাতা-পিতারা কি সন্তানদের বিয়ের আগ্রহের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দ্রুত তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন?
অনেক মাতা-পিতা তো বরং নিজেদের পরিণত বয়সী সন্তানদের ব্যাপারে ভাবেন, তাদের তো এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি; কিংবা বয়স হলেও বিয়ে করার মতো অবস্থানে তারা এখনো পৌঁছতে পারেনি! মাতা-পিতারা ভাবনা-চিন্তা হলো, ছেলেকে আগে লাখপতি হতে হবে, গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে হবে; তারপর আসবে বিয়ের প্রশ্ন! এমনিভাবে মেয়েকেও আগে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে, স্বাবলম্বিনী হতে হবে; তারপর দেখা যাবে বিয়ে।
আসলে পরিবারের কেউই বুঝতে চায় না যুবক-যুবতিদের কষ্ট! এজন্যই তারা লজ্জায় পড়ে না পারে মাতা-পিতাকে কিছু বলতে, আর না পারে বৈধভাবে নিজেরা কিছু করতে। আজকের যুবক-যুবতিদের অল্পসংখ্যকই হয়তো ধৈর্যধারণ করে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশই জড়িয়ে পড়ছে অবৈধ প্রেম-ফ্রি মিক্সিং, এমনকি এসবের শেষ পরিণাম জিনা-ব্যভিচার! এ কথা আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারব না, যৌবনের শুরু থেকে দীর্ঘ একটা সময় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সুযোগ বা পরিবেশ না পাওয়ার কারণেই আজকের যুবক-যুবতিরা হারাম আনন্দ-উল্লাসে জড়িয়ে পড়ছে। উন্মাদ হয়ে গুনাহ-নাফরমানি ইনজয় করছে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।
সুতরাং মাতা-পিতা যদি সত্যিকার অর্থে নিজেদের পরিণত বয়সী সন্তানদের কল্যাণকামী হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে। যথাসময়েই সন্তানদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ___যৌবনের উত্তাল স্রোতে দুলাল-দুলালিদের হারিয়ে যাওয়ার আগেই।
#রুহামার_চমৎকার_উপহার
যেসব অবিবাহিত যুবক-যুবতিরা বিয়ে করে গুনাহমুক্ত পবিত্র দাম্পত্য জীবনযাপন করার কথা ভাবছেন, কিন্তু নিজেদের অভিভাবকদের কাছে মনের এ ইচ্ছেটুকু খুলে বলতে পারছেন না! কিংবা বলতে গিয়ে বারবার লজ্জায় ফিরে আসছেন! আপনারদের জন্য রুহামা পাবলিকেশনের চমৎকার উপহার হিসেবে একটি গ্রন্থ। এ উপহার আরবের খ্যাতিনাম লেখক গবেষক ও দা’ঈ ড. শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম প্রণতি “ইয়া আবি! জাওয়্যিজনি” গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ “হে বাবা আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন” বইটি নিজেও পড়ুন এবং কোনো কৌশলে অভিভাবকের হাতে পৌঁছিয়ে দিন। আশা করি এরপরই তারা বুঝে নেবেন, আদরের দুলাল-দুলালির জন্য আশু কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাই সাহস হারাবেন না! বইটি পৌঁছাতে একটু রিস্ক তো নিতেই হবে। বকুনিও খেতে হবে হয়তো! এরপর আসবে বাসর সজ্জার আয়োজন ….। আরে গুনাহর কাজটাও কি কেউ রিস্ক ছাড়া সহজে করে ফেলতে পারে? গুনাহ-অপরাধে জড়াতে গিয়ে কতজনের যে কত বেহাল দশা হয়েছে,
হচ্ছে__ এমন হরেক খবর আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি পত্রিকা আর মিডিয়াগুলোতে। সুতরাং গুনাহমুক্ত একটি সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য একটু সাহস নিয়েই আগে বাড়তে হবে। তা ছাড়া আপনার মাতা-পিতা তো আপনার কল্যাণকামী। আশা করি বইটি পড়ে সন্তানের জনক-জননীরা তাদের জরুরী একটি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেতন হয়ে উঠবেন এবং পজেটিভ ব্যবস্থাই নেবেন, ইনশাআল্লাহ।
ইয়া আবি! জাওয়্যিজনি গ্রন্থে ফুটে উঠেছে আদরের দুলাল-দুলালির হৃদয়ে গহীনে চেপে রাখা অনুভূতিগুলো
ব্যক্ত করেছে এবং বিয়ে-সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেছে। আশা করি তাদের এই আলোচনা ও অনুভূতিগুলো থেকে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো ম্যাসেজ যুবক-যুবতি জনক-জননী ও সমাজচিন্তকগণ পাবেন।
#__সুচিবিন্যাস___
শুরুর কথা/কেস স্টাডি/সচ্চরিত্রা নারী/বিবাহের গুরুত্ব ও মর্যাদা/পাপের অংশীদার/পরামর্শ/বিয়ের ব্যাপারে উদার হোন/আপনিই জিম্মাদার /পিতারা কাছে সন্তানের হৃদয়ের আকুতি!/কতিপয় বাস্তব অভিজ্ঞতা/বিবাহ দেরিতে হওয়ার কারণ/সমাধানের প্রস্তাব।