আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নুবূওয়াতী জীবনের মুঠোমুঠো অনেক আলোকবিন্দু ছড়িয়ে আছে খাদিজা থেকে আয়েশা—অর্থাৎ সকল স্ত্রীদের মাঝে। উম্মুল মুমিনীনদের সাথে নিয়েই তার অনাবিল জীবন পূর্ণতা পেয়েছে সমগ্রভাবে। নবীজির জীবনটাকে সমগ্রভাবে জানতে সঙ্গত কারণেই তার স্ত্রীদের জীবনেও আমাদেরকে প্রবেশ করতে হবে।
হাফসা রা এর জীবনি থেকে এক টুকরো:
উমর রা খলীফা হবার পর নিজের জন্য বেছে নেন এক ঘোর দারিদ্রের জীবন। পরনের কাপড় তার ছেঁড়া । এখানে ওখানে তালি দেয়া । এ কাপড় পরেই তিনি মদিনায় রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নেন ।
উমর কন্যা হাফসা রা. সুযোগ বুঝে একদিন ভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি তুললেন। বললেন, কয়েকজন সাহাবী পরামর্শের ভিত্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন তাকে । তবে কারো নাম উল্লেখ করলেন না । পাছে খলীফা চটে যান তাদের উপর ।
প্রিয় কন্যার মুখে থেকে কথাটি শোনা মাত্র অন্ধকারে ছেয়ে গেল খলীফার মুখ । যেন ক্রোধের কালো রস ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে অবয়বজুড়ে । রাগতঃস্বরে জানতে চাইলেন-‘কারা তোমাকে শিখিয়েছে এই কথা?’ হাফসা রা. তাদের নাম উল্লেখ করলেন না । কারণ, তাকে বারণ করা হয়েছে প্রকাশ করতে । হাফসা রা. বুঝে নিলেন, তিনি কিছুতেই সম্মত হবেন না । তাই বৃথা চেষ্টা করে কোন লাভ নেই ।
কিছুটা সময় চুপ থেকে খলীফা নরম স্বরে হাফসাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, বল তো হাফসা! তোমার ঘরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সর্বাধিক ভালো পোশাকটি কেমন ছিল? এটা কি সত্য নয় যে, মাঝে মাঝে এমনও হতো; পরিধানের জন্য শুধু একটি পোশাকই ঘরে ছিল । সেটিও তিনি সকালে ধুয়ে দিয়ে দিতেন । দুপুরে এই পোশাকটি পড়েই নামাজ পড়িয়েছেন!’
হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন যেন । বহুদিন পর আল্লাহর রাসূলের সাথে যাপিত সময়ের কথা মনে পড়ে গেলো । অসাধারণ মানুষটির সাধারণ জীবন যাপনের দৃশ্যগুলো ভেসে উঠলে মনের পর্দায় । তিনি ধরা গলায় বললেন, জি বাবা—আমার ঘরে নবীজির ব্যবহারের জন্য হলুদ রঙের দুইটি মাত্র কাপড় ছিলো । শুধুমাত্র জুমার দিনে বিদেশী অতিথি আসলে তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পরিধান করতেন ।
বল তো আল্লাহর রাসূল সবচেয়ে ভালো খাবার কী খেতেন? তিনি কি দিনের পর দিন অনাহারে থাকতেন না? তোমার কি মনে নেই, তিনি আমৃত্যু কোনোদিন দু-বেলা পেটপুরে খাননি? আজকের দিনের মতো পাতলা রুটি তিনি দেখেননি।’
জি বাবা, আমার সবকিছুই মনে আছে । আর আমরা সাধারণত যবের রুটি খেতাম । সবচে উন্নত খাবারের কথা প্রসঙ্গে বলব, ‘শুধু একদিন ঘিয়ের পাত্রে তলানিতে যেটুকু লেগেছিল, তা গরম রুটিতে মেখে আমরা খেয়েছিলাম । আল্লাহর রাসুলও তা খেয়েছিলেন ।
‘একটু কি বলতে পারবে, তোমার ঘরে সবচেয়ে ভালো বিছানাটি কেমন ছিল? আমি তো দেখেছি, তিনি শুধু চাটাইয়ের ওপর শুয়ে থাকতেন । তার মুবারাক দেহে এর দাগ ফুটে উঠত!’
‘হ্যা বাবা, বিছানার জন্য শুধু একটি মোটা কাপড় ছিল । গরমের সময় কাপড়টি চার ভাঁজ করে বিছিয়ে দিতাম । শীতকালে অর্ধেক বিছিয়ে দিতাম । বাকি অর্ধেক দিয়ে আমরা শীত নিবারণ করতাম ।’
উমর রা. আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না । নবীজির পারিবারিক জীবনের সাধারণ চিত্র বুঝবার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট । এবারে তিনি বললেন, শোন মা—‘তোমাকে যারা আমার কাছে এ কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছে, তাদের বলে দিও, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করতে চাই । তিনি আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রেখে গেছেন । আখিরাতের প্রতি তিনি সমগ্রভাবে অভিনিবিষ্ট ছিলেন । আমিও তারই অনুসরণ করতে চাই ।’
Reviews
There are no reviews yet.