ইমাম গাযযালী রহ.
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান
বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়ার সুবাদে শৈশব থেকেই ধর্মশিক্ষার ভিত শক্ত হয় তার। মায়ের মৃত্যুর পর মাতামহের কাছে চলে গেলেও বেশি দিন সেখানে থাকেননি। পুনরায় পৈত্রিক ভিটায় ফিরে এসে ভর্তি হন পাঁচবাগ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়। এখান থেকেই আলিম এবং ফাজিল পাস করে ঢাকা সরকারি মাদ্রাসায় চলে আসেন। এরপর হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে দুটি কামিল ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এ অঞ্চলের আলিয়া এবং কওমি ধারার মধ্যে বিরাজমান মতপার্থক্য এবং রেষারেষি কখনোই ছুঁতে পারেনি তাকে। তিনি আলিয়া ধারায় পড়েও কওমি ধারার প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। ছাত্রজীবনেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খান লেখালেখি ও সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ‘মাসিক দিশারী’ এবং ‘সাপ্তাহিক নয়া জামানা’য় কাজ করবার পর ১৯৬১ সালে তিনি ‘মাসিক মদীনা’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ দায়িত্বে তিনি আমৃত্যু বহাল ছিলেন। সাংবাদিকতার বাইরেও তিনি বিভিন্ন সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এর বই সমূহ দেশের বাইরেও সমান জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা সহ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এর বই সমগ্র ব্যাপক জনপ্রিয়। ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন’, ‘স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ (সা.)’, ‘জীবনের খেলা ঘরে’, ‘জীবন সায়াহ্নে মানবতার রূপ’, ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’, ‘রিয়াদুস সালেহীন’, ‘সীরাতুন নবী’, ‘খাযায়েনুল ইরফান’, সহ অসংখ্য পাঠকপ্রিয় বই লিখেছেন তিনি।
Reviews
There are no reviews yet.