সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য। যিনি সর্ব স্রষ্টা ও সর্ব দ্রষ্টা। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হােক সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হল পাঁচটি। সর্বপ্রথম হল, ঈমান আর ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হল নামায। কেয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাযেরই হিসাব হইবে। অথচ নামাজ আদায়ের ব্যাপারে আমরা বড়ই উদাসীন। আর যারা নামায আদায় করেন তাদের মধ্যেও নামাযের মাসআলা। মাসায়েল না জানার কারণে অনেকের নামাযই বিনষ্ট হবো । এর মূল কারণ। হয়তো এটাই যে, কিসে নামায ফাসেদ হয়, কী কারণে নামায় পুণরায় পড়তে হয়, কী কারণে নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় ‘ইত্যাদি মাসআলা না জানা। তাছাড়া অনেকে অসুস্থ ও সফর অবস্থায় মনের আন্দাযে নামায আদায় করতে থাকেন। এতে তার নামায বিশুদ্ধভাবে আদায় হল কি হল না, এ ব্যাপারে জানার প্রয়োজন মনে করে না। এমনকি জীবনের কাযা নামায ও যাবতীয় নফল নামাজ যেগুলোর মাধ্যমে মানব জীবনে বান্দা বন্দেগী ফুটে ওঠে। সেগুলোর কোন খবর আজকে আমাদের নেই। অথচ রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ব্যক্তি নামায কে হেফাজত করবে। অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাবের প্রতি লক্ষ রেখে আদায় করবে, সে নামায তার জন্য কেয়ামতের দিন নূর হবে। হিসাবের সময় দলিল হবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির উসিলা হবে।
আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাজত করবে না; অর্থাৎ সঠিকভাবে নামায আদায়। করবে না। উক্ত নামায তার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে না। হিসাব নিকাশের সময় দলিল হবে না। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। না; বরং কিয়ামতের দিন জাহান্নামী দের সঙ্গে তার হাশর হবে।
সহিহ শুদ্ধ ইবাদত করতে মাসআলা জানার গুরুত্ব অপরিসীম। মাসআলা- মাসায়েল জেনে ইবাদাত করা আর মাসআলা না জেনে ইবাদাত করার মধ্যে আসমান-জমিনের ব্যবধান। তাছাড়া রাসুল সা. বলেছেন কোরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা একশত রাকাত নফল নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর শরীয়তের একটি মাসআলা শিক্ষা করা হাজার রাকাত নফল নামায পড়া। থেকে উত্তম । ইবনে মাজাহ পৃ. এমনি এক ইবাদাত সম্পর্কে তথাকথিত আহলে হাদিসরা সহিহ হাদিসের দোহাই দিয়ে সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। এজন্য তাদের পরিচয় এবং উক্তিগুলাের সমাধান এবং যথাযথ কিছু মাসায়েলের জবাবসহ এই রেসালাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদত সম্পর্কে আল্লাহর রহমতে আজ পর্যন্ত অনেক কিতাব ও রেসালা লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এরপরও নামাযের এই গুরুত্বপূর্ণ আলােচিত দিকটা সবার সামনে কিভাবে তুলে ধরা যায়, সেজন্য দীর্ঘদিন যাবত আমার মনে নানারকম জল্পনা চলছিল। একপর্যায়ে মনে উদ্ভাসিত হল যে, অধমের এই প্রচেষ্টাকে প্রশ্ন-উত্তর আকারে প্রকাশ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা গুলো এই রেসালাতে জমা করবে। অতঃপর দীর্ঘদিন মেহনত ও চেষ্টায় এবং শত পেরেশানীর মাঝেও মেহেরবান আল্লাহ আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে প্রকাশ করার তাওফিক দিয়েছেন এবং শিক্ষিত ও জনসাধারণ যেন সহসায় নামাজের মাসআলা গুলো বুঝতে পারে সে জন্য প্রশ্ন-উত্তর সাজে তৈরি করেছি। সাথে সাথে আহলে ইলমরাও যেন উপকৃত হতে পারেন, সে জন্য বর্ণিত মাসআলার প্রমাণস্বরূপ ইবারত বা দলিল তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। যাতে কোন মাসআলার ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে উল্লেখ্য কিতাব দেখে নিতে পারেন। কারণ, মানুষ হাজার চেষ্টা করলেও ভুল থাকা স্বাভাবিক।
উদ্ধৃতিসহ নামায সম্পর্কীয় ৬০৭ টি প্রশ্নের সমাধান দিয়ে কিতাবটি সংকলন করে আমার প্রাণপ্রিয় উস্তাদদের নযর রাখি। উস্তাদদের নযর ও আমার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টার পরও ভুলত্রুটি থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিদগ্ধ পাঠকের দৃষ্টিতে কোন ভুলত্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে আমাকে অবহিত করলে কৃতজ্ঞ থাকব। পরিশেষে আল্লাহ পাকের শাহী দরবারে প্রার্থনা, তিনি যেন আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটুকু কবুল করেন। এবং সমস্ত মুসলমানদেরকে এর দ্বারা উপকৃত করেন। আর আখেরাতে এই কিতাবটি আমার, আমার মাতা-পিতা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, আত্মীয় স্বজন, যারা আজকে দুনিয়াতে নেই ও যাদের উসিলায়। আমার ইলমে দ্বীন লাভের সৌভাগ্য অর্জন হয়েছে, সেই সমস্ত ওস্তাদদের। নাজাতের উসিলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আমিন।
Reviews
There are no reviews yet.