বাংলা ভাষায় বহুতর শব্দের মধ্যে চারটি অক্ষরের সমন্বয়ে গ্রথিত মধুমিশ্রিত ছোট্ট একটি প্রণয়াতুর শব্দ হলো “ভালোবাসা”। ভালোবাসা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। যাকে আরবী পরিভাষায় ‘মুহাব্বাত’ এবং ইংরেজী শব্দযোগে ‘love’ অভিধায় ব্যক্ত করা হয়। শব্দ তিনটি ত্রি-ভাষার হলেও মর্মযোগে কিন্তু তিনোটি একই অর্থ বহনশীল। অর্থাৎ এগুলোর অর্থ হচ্ছে–কারও প্রতি আকৃষ্ট হওয়া, অনুরাগী হওয়া, প্রীতিভাবাপন্ন হওয়া, অনুভূতিশীল হওয়া, স্নেহশীল হওয়া, শ্রদ্ধাশীল হওয়া, ভক্তিশীল হওয়া, আকর্ষিত হওয়া ইত্যাদি। যা সৃষ্টিগতভাবে প্রতিটি মানবাত্মার সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থাৎ এটা মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্য ও অনন্যতম একটি চাহিদা।
যেমন–
–প্রানিকূলের প্রতি স্রষ্টার নিখাদ ভালোবাসা।
–গর্ভে থাকা ভ্রূণ ও সদ্য ভূমিষ্ঠ তনুজ-তনুজার প্রতি মমতাময়ী মায়ের অগাধ ভালোবাসা।
–স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার অতলস্পর্শী হৃদ্যতা বন্ধনের ভালোবাসা।
–খোদায়ি অনুভূতি, আত্মার তৃপ্তি, মনের প্রশান্তি ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভালোবাসা হলো মনের গহীনে সুপ্তোত্থিত, পরোক্ষ ও প্রণয়মিশ্রিত এক বিনি সুতোর টান। সারগর্ভময় কোন বস্তুর প্রতি নিঃস্বার্থ অনুভূতির পাশাপাশি প্রবল আকর্ষণ এবং অফুরন্ত হৃদয়ের টান থাকার নামই হলো মূলত ভালোবাসা। বিশেষ কোন পার্সনের জন্য স্নেহ-মমতা, রাগ-অনুরাগ, সোহাগ-সমাদর, অভিযোগ-অনুযোগ ও প্রেম-প্রীতির বেহিসাবি বহিঃপ্রকাশ-ই হচ্ছে ভালোবাসা। যা বৈধ হলে সৌহার্দ স্বপ্নিল আকাশের মতো সত্য ও শিশির ভেজা ফুলের মতো পবিত্র। তাহলে এর জন্য রয়েছে স্বয়ং স্রষ্টার তরফ থেকে পূণ্য ও সওয়ারের অপার ঘোষণা। আর যদি অবৈধ ও অনৈতিকভাবে হয়, তা হলে এর জন্য রয়েছে তাঁর তরফ থেকে কঠিন আযাব ও কঠোর শাস্তির ঘোষণা। বৈধ ও নৈতিকভাবে হলে এর সবকিছুই বৈধ। আর অবৈধ ও অনৈতিকভাবে হলে এর কোনো কিছুই বৈধ নয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে ভালোবাসা আর রসে ভরা আবেগও দিয়েছেন। তাই তো মানুষ তার হৃদয়াভ্যন্তরীন নিকষকালো অন্ধকার দূরীভূত করে জীবনে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলার জন্যে, সাই সাই করে জীবনে উন্নতি আনার জন্যে ভালোবাসাকে একটি অতুলনীয় মাধ্যম ও হাতিয়ার মনে করে। সত্যিই ভালোবাসা বিয়োজিত মানুষগুলো সমাজে পরস্পর সহযোগিতা ও সহানুভূতির সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতে অসমর্থ ও অক্ষম হয়ে পড়ে। সেজন্যেই তো পৃথিবীর প্রথম মানুষ প্রথম বৈধ প্রেমিক।
অবাক হয়েছেন অনেকে। প্রথম মানুষ প্রথম বৈধ প্রেমিক! কি করে সম্ভব?
চলুন ঘটনায় ডুব দেয়া যাক–
আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করে সমস্ত ফেরেশতাদের দ্বারা সিজদা করিয়ে মর্যাদার শীর্ষ আসনে আসীন করান। অফুরন্ত নাজ-নি’আমত দিয়ে জান্নাতে থাকতেও দেন। এত কিছুর পরও আদম আলাইহিস সালামের মনমাঝারে কী যেনো একটা শূন্যতা খচখচ করতে লাগল। জীবনের এই একাকিত্ব তাঁর কাছে নিদারূণ অসহ্য ও অসহনীয় হয়ে উঠলো। মহামহিম একক সত্তা তাঁর অন্তরের হাতুড়িপেটার কারণ বুঝতে পারলেন। একদিন আদম আলাইহিস সালাম নিদ্রাবিষ্ট ছিলেন। আচানক তাঁর ঘুম ভেঙে গেলো। চোখের পলক খুলেই দেখতে পেলেন যে, তার পাশে এক পরমাসুন্দরী নারী। দেখা মাত্রই তিনি তার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হলেন। ভালোবাসার উৎসাহ উদ্দীপনা আর আবেগে তাঁর হৃদয়মরু উথলে উঠলো। তিনি তাঁকে কাছে পেতে হস্তদ্বয় সম্মুখপানে প্রসারিত করতে চাইলেন। ফেরেশতারা বাঁধা গেড়ে বলল–আদম! মহর প্রদান করতে হবে পহেলা। এরপর তাঁর কাছ ঘেঁষতে পারবা। অর্থাৎ বিয়ে সম্পন্ন হতে হবে তোমাদের দু’জনার আগে। তারপর…। কপালে চিন্তার ভাজ এঁটে আদম আলাইহিস সালাম বললেন–’মহরানা কী দিবো আমি’? ফেরেশতারা তাঁর চিন্তা নির্মূল করে বললেন, –বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তিনবার দুরূদ শরীফ পড়তে হবে–।
আদম আলাইহিস সালামও তাই করলেন।(1) এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে পবিত্র পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করে দিলেন এবং বললেন–
“হে আদম! যাও, তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াও। যা ইচ্ছা তা পরিতৃপ্তি সহকারে আহার কর।” (সুরা বাকারা। আয়াত ক্রম–২৫)
এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বৈধপন্থার ভালোবাসাকে বান্দার জন্য সুনির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং এর বিকাশের জন্য বিবাহ সূত্রের মতো অতি উন্নত, মহাপবিত্র ও সবচেয়ে পরিমার্জিত ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।
আধুনিকতার আঁড়ালে
লেখক : যাইনাব বিনতে মুহাম্মাদ আলী
প্রকাশক : ইবরাত পাবলিকেশন
বিষয় : বিবিধ বই
230 ৳ Original price was: 230 ৳ .161 ৳ Current price is: 161 ৳ .
প্রতি অর্ডারে থাকছে আকর্ষণীয় Bookmark ফ্রি!
বই | আধুনিকতার আঁড়ালে |
---|---|
লেখক | |
প্রকাশক | |
বাঁধাই | পেপারব্যাক |
ভাষা | বাংলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
Related products
-50%
-50%
-50%
-40%
-50%
-50%
-30%
Reviews
There are no reviews yet.