পবিত্র কুরআনে কারিমের বহু আয়াতে, রাসুল সা.-এর অসংখ্য হাদিসে মুমিন বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অনেক ওয়াদা ও সুসংবাদের কথা বর্ণিত রয়েছে। ঘোষিত হয়েছে মুমিনদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় দানের কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমরা আল্লাহর এসব ওয়াদা ও সুসংবাদের কথা ভুলে গিয়ে হতাশার অতল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি!! দুর্বলতা ও হীনম্মন্যতা আজ আমাদের এতটাই গ্রাস করেছে যে, আমরা নিজেদের সোনালি অতীতের কথাও ভুলে বসেছি!! পাপাচার-অনাচারে ছেয়ে যাওয়া এই পৃথিবীটা যে আমাদের হাত ধরেই পুনরায় ইনসাফে ভরে যেতে পারে, সেই আশাটুকু আজ আমাদের হৃদয়ে জাগে না!! কেন?? আমাদের কী হলো?! আল্লাহর ওপর ভরসা, তাঁর কাছেই সাহায্য ও কল্যাণের আশা করা…এই উত্তম গুণগুলো আমাদের থেকে কোথায় হারিয়ে গেল!!
হ্যাঁ, হতাশা আর হীনম্মন্যতার জঞ্জালকে ছুড়ে ফেলে আমাদের আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নিরাশার উপত্যকা থেকে নিজেদের বের করে আনতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তাঁর কাছেই উত্তম আশা রেখে সামনে কদম বাড়াতে হবে। আমরা যদি রব্বুল আলামিনের সাথে আমাদের কৃত প্রতিশ্রুতিগুলো যথাযথভাবে পূর্ণ করি, তবেই তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ করবেন! আমাদেরকে পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্তি দেবেন—বিজয়ের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করাবেন।
প্রিয় পাঠক, হতাশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে আমরা যেন আল্লাহর ওয়াদা ও সুসংবাদের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করতে পারি, আল্লাহর বিধানমতে জীবনযাপন করে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য লাভে ধন্য হতে পারি—এই উত্তম শিক্ষাই পাব আল্লাহর পক্ষ থেকে ৩০টি সুসংবাদ ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে লিখিত ড. খালিদ আবু শাদির অনন্যসাধারণ উপহার (ينابيع الرجاء) গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের বাংলা অনুবাদ ‘আশার ফোয়ারা’ বইটিতে…
আশার ফোয়ারা বইটির ফ্রি পিডিএফ অফিসিয়ালি অনুমোদিত নয়।
আশার ফোয়ারা বইটি পড়ে রিভিউ সেকশনে রিভিউ দিয়ে অপরকে উৎসাহিত করুন।
mansur –
আল্লাহ তাআলা মানুষকে এই মর্মে সুসংবাদ দিয়ে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক কষ্টের পরেই সুখ রয়েছে। তিনি একই কথা বারবার উল্লেখ করে এর গুরুত্ব, দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছেন; ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন।
হ্যাঁ! এটাই সত্য যে, সংকীর্ণতার পরে স্বস্তিও রয়েছে এবং কাঠিন্যের পরে সহজতা রয়েছে। বিপদাপদ যেভাবে ক্রমান্বয়ে ধেয়ে আসে, আবার সেভাবে পালিয়েও যায়। প্রতিটি দুঃখ, কষ্ট ও বিপদের ভাঁজে ভাঁজে সেগুলোর উপশম ও সমাধান লুক্কায়িত আছে। আল্লাহর ইচ্ছা বড়ই অদ্ভুত! তিনি দ্রুতই কষ্ট লাঘব করে দেন। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার পর কষ্টে নিপতিত হওয়ার চেয়ে কষ্টে থাকার পর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া অধিক উত্তম। তবে আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্তই গ্রহণযোগ্য ও উপযুক্ত।
🔸যা দেখে আল্লাহ তাআলা হাসেন
বিপদাক্রান্ত হলে অধিকাংশ মানুষই হতাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা তো সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন। প্রতিটি দুর্ভাবনার একটি সমাপ্তি রেখেছেন। যেকোনো বিপদের উপশম রেখে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সেগুলো আশা করতে থাকে। না পেলে আবার হতাশও হয়। আল্লাহ তাআলা এসব হতাশা আর নৈরাশ্য দেখে আশ্চর্যান্বিত হন এবং সেগুলোর উপশম ও সমাধান খুব কাছে দেখে হাসতে থাকেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে :
ضَحِكَ رَبُّنَا عَزَّ وَجَلَّ مِنْ قُنُوطِ عِبَادِهِ وَقُرْبِ غِيَرِهِ
‘আমাদের মহান প্রতিপালক বান্দাদের হতাশা এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তা কেটে যেতে দেখে হাসেন।’
আবু রাজিন বলেন :
‘আল্লাহ তাআলাও কি হাসেন?!’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর বললেন, (لن نعدم من رب يضحك خيرا) ‘আমরা কিছুতেই এমন প্রতিপালককে হারাতে চাই না, যিনি বান্দার কল্যাণ দেখে হাসেন।’
.
ড. খালিদ আবু শাদি রচিত “আশার ফোয়ারা” বই থেকে চয়িত।