‘উপার্জনের জন্য বিদেশগমন নাজায়েজ ঘোষণা করা দরকার।’
আদিবের কথা শুনে রীতিমতো গা জ্বলে উঠল হাসানের। এক কাজিনের জন্য পরামর্শ চাইলাম, কোথায় একটু পরামর্শ দেবে তা না, উলটো বয়ান শোনাচ্ছে। এক প্লাটুন রাগ মিশিয়ে নাকমুখ এক করে হাসান প্রতিত্তোর করল, ‘কী বললি তুই?’
আদিব এক-পা পিছিয়ে বিনয়ের সাথে বলল, ‘দাঁড়া, তেড়ে আসবি না। আগে শোন আমার কথা।’
শত হলেও আদিব অহেতুক রাগিয়ে দেয়ার মতো কথা বলার ছেলে না। কিন্তু এমন একটি কথা বলার কারণই বা কী! হাসান ভাবছে। আদিব ওর ভাবনায় ছেঁদ ফেলে বলল, ‘একটু রিল্যাক্স হয়ে ভেবে দেখ হাসান। আমারা আমাদের পরিবারকে সুখী করতে ও নিজে স্বচ্ছল হতে একগাদা টাকা খরচ করে বিদেশ পাড়ি জমিয়ে যে অমানবিক কষ্ট করি, সেই টাকা ও সেই পরিশ্রম যদি দেশে ইনভেস্ট করতাম তবে আমি মনে করি পরিবার নিয়ে বেশ ভালো থাকতাম।
কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের ইগো। বিদেশ গিয়ে সুইপার হতে রাজি। আর দেশে একটা চায়ের দোকান দিতে বা চটপটি বেঁচতে রাজি না। সেখানে কী মানবেতর জীবন অতিবাহিত করতে হয় তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
মাসুদ ভাইকে তো চিনিস! আজ অনেকদিন হলো আমাদের বাসার পাশেই চটপটি বিক্রি করে। একদিন জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, দৈনিক তার ৫-৬ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। এরমধ্যে ২-৩ হাজার টাকা তার লাভ থাকে। অর্থাৎ মান্থলী ৬০-৯০ হাজার টাকা! ভাবতে পারিস?’
হাসান ক্ষানিকটা বিব্রত বোধ করল। বিশ্বাস হতে চাইল না, একজন চটপটিওয়ালা মাসে ৬০-৯০ হাজার টাকা আয় করে! কিন্তু ঐ যে! দেশে থাকলে সবাই চটপটিওয়ালা বলবে। আর বিদেশ গেলে তো ভাবই আলাদা। হই না সুইপার। কেউ কি গিয়ে দেখছে নাকি আমি কী করি না করি…
আসলে ঠিক এভাবে বলার জন্য আমি সরি। কিন্তু তোর কাছে মন খুলে কিছু বলতে না পারলে আর বলবই বা কার কাছে বল? আমি জানি, এভাবে বলাটা প্রবাসীদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে, কিন্তু তবুও ধরে নে, একবার ইচ্ছে করেই না হয় একটু কষ্ট দিলাম। তাই তাদের সকলের কাছে আমি সরি বলে নিচ্ছি।
আজ কেন এটা করলাম জানিস? আর কেনই বা ক্ষমা চাইলাম! আমি জানি, প্রবাসীরা সেখানে অনেক অবর্ণনীয় কষ্ট করছেন। তাদের মাধ্যমে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও আমরা অর্জন করছি। এই দেশ প্রচুর রেমিট্যান্স পাচ্ছে। কাজেই আমাদের দেশ ও দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা এই প্রবাসীদের প্রতি বাহ্যত বিরূপ মন্তব্য করায় আমার এই ক্ষমা চাওয়া। এবার শোন তাহলে কেন এমনটা করলাম।’
‘আচ্ছা বল তোর এমন কথার হেতু, বল।’
আদিব পুনরায় বলতে শুরু করল, ‘ইনসাফের সাথে একটু ভাবা উচিৎ। একটি মেয়ে তার শেকড় ছেড়ে অপরিচিত কোনো ছেলের কাছে নিজেকে সপে দেয় কীসের আশায়! এর পেছনে কি কেবল আর্থিক চাহিদাই থাকে? না। থাকে শারীরিক ও মানুষিক কিছু চাহিদাও। স্ত্রী হিসেবে যে মানুষটি আমার ঘরে পড়ে আছে, দিনরাত খেটেখুটে তার আর্থিক চাহিদা তো আমরা দিব্বি পূরণ করছি। সেজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু তার শারীরিক ও মানুষিক চাহিদা কে পূরণ করবে?
সরি টু সে! একটি মেয়ে স্বামী ব্যতীত সর্বোচ্চ চার মাস নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর বেশী হলে তার খুব কষ্ট হয়। কত কষ্ট? এককথায় ‘খুব কষ্ট’। এটা বলা যায় না। বলার জিনিষ না।
মেয়েটি যদি খুব বেশি ধার্মিক না হয় সেক্ষেত্রে অধিকাংশ মেয়েই পরকীয়া নামক বিষাক্ত জীবাণুতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সামাজিক মূল্যবোধ ধরে রাখতে চাইলে পরকীয়ায় না জড়িয়ে ইন্টারনেটের অন্ধকার জগতে দিনরাত ডুবে থাকে, এবং একপর্যায়ে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়ে নিজের হাত বা অন্যকিছুকে নিজের স্বামী বানিয়ে নেয়। এসব কথা মুখে বলতেও লজ্জা হচ্ছে আমার। কিন্তু তবুও এই সমাজকে বাঁচাতে হলে আমাকে বলতে হবে।
তো এর ফলাফল দাঁড়ায়- পরকীয়ার কারণে সামাজিক নানান জটিলতা সহ যত্রতত্র অবৈধ সন্তানের ছড়াছড়ি। আর সমেহনের কারণে স্বামীর চাহিদা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এবং খুব সহজেই বিভিন্ন মমরণঘাতী রোগ বাসা বাঁধে। একপর্যায়ে স্বামীর আর কোন প্রয়োজনই সে বোধ করে না। যৌবন ফুরিয়ে টাকার বস্তা নিয়ে স্বামী যখন দেশে আসবে, তখন যদি এসে দেখে স্ত্রী লাপাত্তা, সেটা খুব একটা অস্বাভাবিক হবে না। আর যদি এমনটা না-ও হয়, সেক্ষেত্রে শুরু হবে কারণে-অকারণে তিলকে তাল বানিয়ে রেষারেষি আর মনমালিন্যতা। এভাবে জীবনের অবশিষ্ট প্রতিটি ক্ষণ বিষিয়ে উঠবে।
আর মেয়েটি যদি দ্বীনদার ও লাজুক প্রকৃতির হয় তাহলে সে এসব গুনাহে জড়াতে পারে না। আবার কোন সমাধানও পায় না। এমনকি কাউকে এই চাপা কষ্টের কথা বলতেও পারে না।
এই ব্যাপারে একবার ডা. রাকিব স্যারকে আমি কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। যে স্যার, এমতাবস্থায় এমন মেয়েদের ঠিক কী ধরণের সমস্যায় পড়তে দেখা যায়? বা কী ধরণের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়?
Reviews
There are no reviews yet.