রমাদান। মুমিনের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যে সময়ে মুমিন তার রবের সাথে নিজের সম্পর্ককে ঝালাই করে নেয়। রবের দুয়ারে নিজেকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে দেয়। তাই আমাদের পূর্বসূরিগণ রমাদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতেন। রমাদানের জন্য দিন গণনা করতেন। বছরের অবশিষ্ট সময়ে রমাদানের জন্য প্রতীক্ষা করতেন। রমাদান এলেই সজীব হয়ে উঠতো তাদের হৃদয়। আলোকিত হয়ে উঠতো তাদের মসজিদ। ইবাদত ও আল্লাহপ্রেমের এক জান্নাতি পরিবেশ তৈরি হতো চারিদিকে।
রমাদান ও রমাদানের বাইরে আমাদের পূর্বসূরিদের সালাত, সিয়াম, তিলাওয়াত ও যিকিরের গল্পগুলো শুনলে আমাদের কাছে কেমন বিস্ময়কর মনে হয়। আমাদের মস্তিষ্ক বিষয়গুলোকে সহজে ধারণ করে নিতে পারে না। তাদের সেই বিষয়গুলো আমাদের সামনে আলোচনা করা হলে কেমন আশ্চর্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি আমরা। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এমনটিও কি সম্ভব? কেউ কেউ আরেক ধাপ আগ বেড়ে সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠেন এবং নানা রকম অবান্তর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। আমাদের এ আচরণ মূলত আমাদের পদস্খলনের চিহ্ন। পূর্বসূরিদের সারা রাত সালাতে দাঁড়িয়ে থাকা, এক রাতে কুরআন খতম করা, ইশার অযুতে বছরের পর বছর ফজরের সালাত আদায় করা; এসব ঘটনাকে অবিশ্বাস্য মনে করা মূলত আমলের দিক থেকে আমাদের দৈন্যেরই প্রমাণ। মূলত সালাফের দ্বীন আমাদের কাছে দিনদিন কেমন যেন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে। দ্বীন যেমন অপরিচিত অবস্থায় এসেছিল তেমনই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
বক্ষমান পুস্তিকাটি শাইখ খালিদ আর-রাশিদ হাফিযাহুল্লাহর রমাদান সংক্রান্ত একটি খুতবার সংকলন। শাইখের খুতবার এক অসাধারণ হৃদয়স্পর্শী ভঙ্গিমা রয়েছে। কান্নামাখা কণ্ঠে তার কথাগুলো শ্রোতাদের হৃদয়ে আঁচড় কাটে। তিনি কথা বলেন উম্মাহর জন্য অসামান্য দরদকে বুকে ধারণ করে। তার খুতবার সেই বৈশিষ্ট্যটুকু অনুবাদে কতটুকু রক্ষা পেয়েছে সে বিশ্লেষণ অবশ্যই পাঠক করবেন। আমরা শুধু আমাদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টাটুকু করতে পেরেছি। আল্লাহ শাইখকে জালিমের জিন্দানখানা থেকে দ্রুত মুক্তি দান করুন।
প্রতীক্ষার রমাদান
লেখক : শাইখ খালিদ আর-রাশিদ
প্রকাশক : শব্দতরু
60 ৳ Original price was: 60 ৳ .42 ৳ Current price is: 42 ৳ .
প্রতীক্ষার রমাদান বইটি পড়ে রিভিউ সেকশনে রিভিউ দিয়ে অপরকে উৎসাহিত করুন।
বই | প্রতীক্ষার রমাদান |
---|---|
লেখক | |
অনুবাদক | নাজমুল হক সাকিব |
প্রকাশক | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 60 |
বাঁধাই | পেপারব্যাক (ছোট সাইজ) |
শাইখ খালিদ আর-রাশিদ
শায়খ খালিদ আর রাশেদ। একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি আদর্শ। একটি বিপ্লব। কথার জাদুকর। একটি উম্মাহ। হৃদয়ের সাথে যবানের এমন যুগপৎ মেলবন্ধন যার মধ্যে বিষ্ময়কেও যেন বিষ্মিত করেছে। উম্মাহর দহন-যন্ত্রনা যার মাঝে প্রতিফলিত হয় দারুনভাবে। হৃদয়খানি কতটা প্রশস্ত আর উর্বর হলে যবান এতটা তেজস্বী হয়, বিগলিত হয়! আত্মা কতটা পরিশুদ্ধ হলে তাকওয়ার বয়ান এতটা হৃদয়গ্রাহী হয়! ইলম, তাকওয়া, তাযকিয়া, জিহাদ- সর্বত্র তাঁর ভাবনা-চিন্তার পরিপক্ক দিকনির্দেশনা পরিব্যাপ্ত। ঘুমিয়ে পড়া উম্মাহর ঝিমিয়ে পড়া চেতনায় প্রেরণার বাতিঘর হিসেবেই যেন তাঁর আত্মপ্রকাশ হয়েছে। তবে, এ গুণী মানুষটির জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে দীন-ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে অমনোযোগীতায়। উদাসীনতায়। দীনের পথে তাঁর প্রত্যাবর্তনটা কীভাবে হয়? চলুন, তাঁর যবানিতেই শুনে আসি। 'আমার বয়স তখনও ত্রিশ পেরোয়নি। আমার স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা। আড্ডাবাজি, পরনিন্দা আর দোষচর্চায় আমার সময় কাটতো। কারো কণ্ঠ আর অঙ্গভঙ্গি নকল করে ভর মজমায় তার দোষচর্চা করাটা আমার কাছে শিল্পের মতো মনে হতো। দীনের সাথে আমার ন্যূনতম সম্পর্ক ছিল না। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কাটতো আমার সময়। রাত করে ফিরতাম ঘরে। এরইমধ্যে একদিন শুনি আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে সে। নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে তাকে। সংবাদ শুনে আমি ছুটে যাই সেখানে। আমার এখনও মনে আছে, সে রাতেও আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজিতে মত্ত ছিলাম। একসময় খবর পাই আমার ছেলে হয়েছে। খুশি হই, তবে স্বাভাবিক অনুভূতির মাত্রা পেরোয় নি-যেমনটা প্রথমবার বাবা হলে হওয়ার কথা। তার নাম রাখা হয় সালিম। একটু হাটতে শুরু করলেই বুঝতে পারি ছেলেটি আমার প্রতিবন্ধী। আমার মনে আছে, একবার আমি এলাকার এক ব্যক্তির দোষচর্চা করতে গিয়ে ভর মজমায় তার খুঁড়িয়ে হাঁটার ভঙ্গি নকল করে তাকে ব্যঙ্গ করি। সে তখন মনোকষ্টে বদ দুআ করে, আমার যেন প্রতিবন্ধী সন্তান হয়। সালিমের এ অবস্থায় আমার সে বদ দুআর কথা স্মরণ হয়। তবে পরক্ষণেই তা ভুলে যাই। এরপর থেকে তার প্রতি আমার আগ্রহ শূন্যে নেমে আসে। সময় আপন গতিতে আগায়। এসময়ে আমি আরো দুই ছেলের বাবা হই। আমার ব্যক্তিজীবন আগের গতিতেই চলতে থাকে। পরিবারের প্রতি দায়িত্বহীনতা আর সন্তানদের প্রতি রসবোধ আর মমতার সামান্যই আমার মধ্যে ছিল। বিশেষ করে সালিমের কোন খোঁজ-খবরই আমি নিতাম না। অন্য দুটোর পড়াশোনার খোঁজ-খবর মাঝেমধ্যে নিলেও, তার ব্যাপারে ছিলাম নির্বিকার, নিরাগ্রহী। তাকে আমার পরিবারের সদস্যই মনে হত না। আমার অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক ছিল। আমার ইমানের ধিকিধিকি নূর আমার হৃদয়ের অাঁধারকে আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট তেজস্বী ছিল না। এদিকে আমার স্ত্রীর দুআ অব্যাহত ছিল। মহিয়সী এই নারী আমার হেদায়াতের জন্য দু হাত তুলে অঝোরে অশ্রু ঝরাতো। তার দরদী কান্নাই হয়তো আল্লাহ ভালোবেসেছিলেন। একদিনের ঘটনা। আমি বাড়ি ফিরে দরোজায় টোকা দিই। এটা আমার নিত্যদিনের স্বভাব। আর তখন ছোট দু ছেলের একটা দরোজা খুলে দেয়। বড়টি কখনোই সামনে আসে না। আমি অপছন্দ করি বিধায় তার মা তাকে আড়ালেই রাখে। তবে, সেদিন দরোজা খুললে দেখি সালিম দাঁড়ানো। আমি নিস্পৃহভাবে আমার রুমের দিকে হাঁটা দিই। পেছন থেকে কান্নার শব্দ শুনে ফিরে দেখি সালিম নিঃশব্দে কাঁদছে। তার কান্না কেন যেন আমার হৃদয়ে ঝাঁকুনি দেয়। আমি কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করি। সে বলে, 'বাবা, আজ জুমআর দিন। খুতবার সময় ঘনিয়ে আসছে; কিন্তু... ওদের একজনও এখনও ঘরে ফিরেনি! আমি কার সাথে নামাজ আদায় করতে যাবো?' এটুকু বলে সে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। আমি তার কথা শুনে বিষ্ময়াভিভূত হই। তার জড়ানো কথাগুলো আমার হৃদয়ে ঝড় বইয়ে দেয়। ভেতরের ভালো মানসিকতা যেন জেগে ওঠে। ভাবি, এইটুকুন বাচ্চা! শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নামাজের জন্য, মসজিদের জন্য এতটা ব্যাকুল?! আর আমি..? আমি তাৎক্ষণিকভাবেই তাকে এ বলে সান্ত্বনা দিই, বাবা! আমিই তোমাকে মসজিদে নিয়ে যাব! ঠিক আছে? আমার কথা শুনে সে বারবার আমার দিকে তাকাতে থাকে। কোনভাবেই যে মিলছে না আমার স্বভাবের সাথে এটা! যে বাবা তার সাথে কথা বলা দূরে থাক, তার ছায়াও মাড়ায় না;তার এমন কথা বিশ্বাসযোগ্য হয় কী করে? তবে আমার দৃঢ়তায় সে আশ্বস্ত হয়। মসজিদে নামাজ শেষে সে জায়গা না ছেড়ে বসে থাকে। মসজিদ যখন প্রায় ফাঁকা হয়, তখন সে তাকে একটি কুরআন শরীফ এনে দিতে বলে। আমি ভাবি, সে তো ঠিকমতো কথাই বলতে পারে না, তার ওপর সে অন্ধ-- কুরআন শরীফ কীভাবে শিখলো? আমি তো তাকে কোন মকতবেও ভর্তি করি নি! সে বলে, আমি যেন 'সুরা কাহাফ' খুলে দিই। আমি সেই ছোটবেলা পড়েছি একটু আধটু। সূচী দেখে অনেক ঘেঁটেঘুঁটে 'সুরা কাহাফ' বের করে তার সামনে রেহালে রাখি। ভাবি, সে তো অন্ধ! কিন্তু একি? আমার ছেলে সুরাটি মুখস্থ তেলাওয়াত করে শেষ করে!! আমার মনে শিলপাটার ঠকঠকানি শুরু হয় যেন! আমি কুরআন শরিফটি হাতে নিই। আমার পুরো শরীর কাঁপছে। আমি তেলাওয়াত করতে শুরু করি। আমার হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। হাত তুলি আল্লাহর দরবারে নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চাই। তাওবা করি। কোনভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি। মসজিদে তখনও কিছু মুসল্লি বিদ্যমান। পাছে তারা শুনে ফেলেন এ জন্য দাঁতে দাঁত চেপে কান্না রোধ করার চেষ্টা করি। তবে কান্না যেন হেঁচকির রূপ ধারণ করে। সালিম আমার চোখ মুছে দেয়। আমি তাকে বুকে জড়িয়ে নেই। আহ, সালিম অন্ধ তুমি নও; আমিই বরং অন্ধ। আমি চোখ থাকতেও অন্ধ। কারণ, আমি দীনের পথ ছেড়ে জাহান্নামের পথে হেঁটেছি। অসৎ লোকদের দলে ভিড়েছি, সৎ সঙ্গ ছেড়েছি। আমরা বাড়ি ফিরি।আমার স্ত্রী আমার এ পরিবর্তনে যারপরনাই আনন্দিত হয়। আর সে দিন থেকে মসজিদে জামাত ছাড়া আমি নামাজ আদায় করি নি। পূর্বের খারাপ বন্ধুদের পরিবর্তে কিছু ভালো লোকের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। যাদের সাথে আমার পরিচয় হয় মসজিদের ইলমি পাঠচক্রে। আমি এখানে, এই হালাকাগুলোতে ইমানের স্বাদ লাভ করি। তেলাওয়াতের স্বর্গীয় স্বাদ লাভ করি। যিকিরের তৃপ্তিতে আত্মা প্রশান্ত করি।'শায়খ খালিদ আর রাশেদ যাঁদের কাছে ইলম অর্জন করেন তাদের মধ্যে আছেন, শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায রহ. শায়খ আব্দুল্লাহ বিন জিবরিন রহ. শায়খ আব্দুর রহমান আর বাররাক রহ. শায়খ আব্দুল্লাহ সাদ রহ.দাওয়াতি কার্যক্রম:শায়খ নানারকম ইলমি ও দাওয়াতি হালাকা পরিচালনা করতেন। সৌদি আরবের একাধিক শহরে এসব পাঠচক্র শায়খের তাত্ত্বিক আলোচনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠতো। এ ছাড়াও সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলে শায়খ নানামুখি দাওয়াতি কার্যক্রমে অংশ নিতেন। তাঁর হৃদয়ছোঁয়া বয়ানে বহু যুবক পথের দিশা পেয়েছে। শায়খের লেকচারগুলো ইলম, আমল, তাযকিয়ার সিঞ্চিত মুক্তো যেন! মজলুম মুসলিমদের পক্ষে জিহাদের ঝাণ্ডা নিয়ে নানা প্রান্তে কিতালরত মুজাহিদদের নির্ভীকভাবে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন শায়খ খালিদ আর রাশেদ। তবে তাঁর পৃথিবী কাঁপানো ভাষণ 'ইয়া উম্মাতা মুহাম্মাদ' ‘হে মুহাম্মদ স. এর উম্মত’! ও 'রাআইতুন নাবিয়্যা ইয়াবকী' ‘আমি নবীজীকে কাঁদতে দেখেছি’ ।ডেনমার্ক যখন রাসুল স. এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রচার করে, তখন শায়খ এ ভাষণ প্রদান করেন। এতে তিনি মুসলিম উম্মাহকে সম্বোধন করে হৃদয়ছোঁয়া, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। সর্বস্তরের মুসলিমদের ডেনমার্ক ও তাদের সমর্থনকারী দেশের পন্য বয়কটের উদাত্ত আহ্বান জানান। বিশেষ করে সৌদি আরবের শাসকদের আহ্বান করেন, যেন অনতিবিলম্বে ডেনমার্কের দূতাবাস বন্ধ করে তাদের সাথে সবরকম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। তাঁর এ ভাষণের পর হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা রাজধানী রিয়াদ অভিমুখে যাত্রা করেন। এর মাসখানেকের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রথমে পাঁচ বছর পরে বৃদ্ধি করে পনেরো বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সৌদি রাজতন্ত্রের ইসলামি সাইনবোর্ডের ভেতরের কদাকার তাগুতি চরিত্রের স্বরূপ বোঝার জন্য শুধু শায়খ খালিদ আর রাশেদের অন্যায়ভাবে কারাভোগের ঘটনাই যথেষ্ট।২০০৫ সালে শায়খ বন্দী হন। বন্দী জীবনের প্রথম পাঁচ বছর পরিবারের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর নানান কিসিমের অবর্ণনীয় শাস্তি তো আছেই।আল্লাহ তাআলা শায়খের মুক্তিকে তরান্বিত করুন। তাঁর নানামুখী কর্মময় জীবন, বর্ণিল রূপে উম্মাহর পথচলাকে রঙিন করুক এ আশাবাদ ব্যক্ত করি।
Related products
Ismail Kamdar শাইখ মুহাম্মাদ আল গাজালি শাইখ মুহাম্মাদ ইসমাইল আল-মুকাদ্দাম
Reviews
There are no reviews yet.