│অভিভাবকরা বইটি কেন পড়বেন? কীভাবে পড়বেন?│
প্যারিন্টিং এর উপর অনেক বই রচিত হয়েছে। কিন্তু ড. আইশা হামদানের “Nurturing Eeman In Children” বা “শিশুমনে ঈমানের পরিচর্যা” একেবারেই আলাদা একটি দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা। কারণ এই বইতে তিনি এমন একটি কোর্স সাজিয়েছেন যেখানে শিশু বয়সে সন্তানের মনে ঈমান পরিচর্যা কেন করা উচিত, কীভাবে করা উচিত সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
যারা বইটা পড়বেন তারা অনুধাবন করবেন যে লেখিকা ঈমানের যে বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছেন সেই আলোচনার তিনটা পার্ট আছে।
প্রথমত- ঈমানের সেই শাখা সম্পর্কে কিছু ব্যাসিক আলোচনা, যার মাধ্যমে লক্ষ্য হলো পিতামাতাকে প্রথমে এই বিষয়ে শিক্ষিত করা, তাদেরকে জানানো, প্রশিক্ষিত করা। এখন পিতামাতা যদি ঈমানের এই বিষয়গুলো নিয়ে না-ই জানে, তারা সন্তানকে শেখাবে কি! যেমন ধরুন, একেবারে শুরুতেই আছে ঈমান, আকিদাহ, ইহসান সম্পর্কে শিশুকে শেখাতে হবে। এখন পিতামাতা যদি না-ই জানে ঈমান-আকিদাহ-ইহসান কী জিনিস, এর গুরুত্ব কী, তারা সন্তানকে কীভাবে শেখাবে? আরও আছে তাকদীর নিয়ে আলোচনা, তাকদীর কীভাবে একজন মানুষের জীবনকে সহজ করে দেয় এসব আলোচনা। আছে শিশুর মনে জিহাদ, ইসলামের সোনালী ইতিহাসকে প্রিয় করে তোলার গুরুত্ব, কীভাবে এসব করা যায় সেই কৌশল। এখন পিতামাতা যদি কুরআন সুন্নাহর আলোকে তাকদীর, শরিয়ত সম্মত জিহাদ বিষয়ে কোনো ধারণাই না রাখে, সন্তানকে তো তারা শেখাতে পারবেই না, উল্টো শেখাতে গেলেও হিতে বিপরীত হবে। সেজন্য প্রতিটি অধ্যায়ে ঈমানের এসব বুনিয়াদি বিষয় নিয়ে প্রথমে কিছু বেসিক আলোচনা আছে, যেন পিতামাতা আগে নিজেরা বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়ে আত্মস্থ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত- ঈমানের এই বুনিয়াদি বিষয়টার সাথে আমাদের মুসলিমদের সম্পর্ক কী? এগুলো জানা কেন জরুরি? আমরা যদি ছোট থেকেই সন্তাণের অন্তরে ঈমানের এসব বুনিয়াদি বিষয় গেঁথে দিই, তা তাদের জীবনে কেমন প্রভাব রাখবে? এসব আলোচনার ফলে পিতামাতা অনুধাবন করতে পারবে, সন্তাণের ঈমানের পরিচর্যা করা কেন জরুরি, এর ফলে ঈমান পরিচর্যার এই কাজে তারা ইয়াকীন লাভ করবে, উৎসাহ পাবে।
তৃতীয়ত- ঈমানের বুনিয়াদি বিষয়ে জানা হলো, এর গুরুত্ব কী তাও বোঝা গেল, এখন কীভাবে সন্তানের মনে ঈমানের এসব বিষয় গেঁথে দেওয়া যা? ছোট থেকেই কীভাবে তাদের অন্তরে ঈমানের পরিচর্যা করা যায়? এসব কৌশল এবং সাজেশন পিতামাতা কাজে লাগাবে, সেভাবে নিজের পরিবার এবং শিশুদের মনে ঈমানের পরিচর্যা হবে। এভাবে ছোট্ট চারাগাছ একদিন ডালপালা মেলে মহীরুহ রুপ ধারন করবে। ফুলে ফলে সুশোভিত হবে। জীবনের সেই পর্যায়ে গিয়েই তখনই পিতামাতা বুঝতে পারবে কত মূল্যবান কাজ তারা শিশুর ছোটবেলায় করে রেখেছে।
এভাবে পুরো বইটি একটি কোর্স। যা ধারাবাহিকভাবে এভাবেই সাজানো হয়েছে। এখন কেউ যদি বলে না, ঈমানের, দ্বীনের এসব বুনিয়াদি বিষয় সম্পর্কে আমি খুব ভালো ইলম রাখি, আমার আর কিছু জানার নেই, বোঝার নেই, তাহলে তিনি প্রথম ধাপটা স্কিপ করে যেতে পারেন! কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই সুধারণা রাখার কোনো সুযোগ নেই। একজন আলিম আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমাদের অধিকাংশ মুসলিম নারীর বাস্তবতা হলো, ঠিকঠাক পর্দা কীভাবে করতে হয় সেই বিষয়টাও জানে না। উস্তাদ মুহাম্মদ হুবলসকে মিশরের এক মুসলিম নাকি জিজ্ঞেস করেছিল, “উস্তাদ, স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে কি গোসল ফরয হবে?”। এই লোক বিয়ে করেছে ২০ বছর হয়েছে, আর ২০ বছর পর সে জানতে চাচ্ছে স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে গোসল ফরয হবে কি না!
আমি কাউকে ছোট করতে চাইছি না, কিন্তু বিশ্বাস করুন এটাই আমাদের বাস্তবতা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা এভাবেই দ্বীন না নিজেরা জানছি, না সন্তানদের শেখাচ্ছি। একবার জুমার খুতবায় ইমাম সাহেব বলছিলেন, একবার এক জানাযা পড়াতে গিয়ে তিনি দেখলেন, বাবার জানাযা হচ্ছে আর ছেলে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে, কারণ সে নাকি জানাযা পড়তে জানে না!
ড. আইশা হামদান তাই প্যারেন্টিং এর এই কোর্সে একটি সহজ উপায় বাতলে দিয়েছেন পিতামাতার জন্য। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক শিশুই ইসলামের ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এখন আমরা যদি শিশু বয়সেই এই ফিতরাতের সাথে ঈমানের বুনিয়াদি বিষয়গুলো গেঁথে দিতে পারি, তাহলে প্যারেন্টিং এর বাকি কাজটা এমনিতেই সহজ হয়ে যায়। কারণ শিশু বয়স হলো কাদামাটির মতো। কাদামাটিকে যে শেপ দিবেন, সেটা সেই শেপ ধারন করবে। যত সময় গড়াবে সেই কাদামাটি শক্ত হতে থাকবে, একসময় একে আর ভিন্ন কোনো আকার দেওয়া যাবে না, জোর করে ভিন্ন কোনো আকার দিতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে।
তাই এখনই সময়, আপনার শিশুর অন্তরে ঈমানের পরিচর্যা করুন।
Reviews
There are no reviews yet.