তাকওয়া হচ্ছে মুমিনের সম্বল, আখিরাতের সফরের গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়। যার মাঝে তাকওয়া নেই, সে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না। কারণ, তাকওয়ার বদৌলতেই মানুষ ফুরকান (ভালো-মন্দের পার্থক্যকারী গুণ) লাভ করে। তাকওয়া বা আল্লাহভীতিই মানুষকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, আর ভালো কাজে উৎসাহী করে।
তাকওয়া মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য, পাথেয় লাভের পথ। তাকওয়া মানুষকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে, জাহান্নামের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাকওয়ার মাধ্যমেই অর্জিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি।
আমাদের এই বইটি তাকওয়ার মাহাত্ম নিয়েই। এই বইতে তাকওয়া নিয়ে তিন জন পূর্বসূরী ইমামের আলোচনা সংকলন করা হয়েছে। তাকওয়ার গুরুত্ব ও মাহাত্ম নিয়ে কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্য ও সালাফদের তাগিদ আলোচিত হয়েছে এতে। আমাদের পিপাসার্ত অন্তরে তাকওয়ার বীজ রোপণে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, ইন শা আল্লাহ।
.
তাকওয়া: মুমিনের সম্বল
লেখক : ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ., ইমাম ইবনে কাইয়্যিম জাওজিয়্যা রহ., ইমাম গাযযালী রহ.
প্রকাশক : সন্দীপন প্রকাশন
100 ৳ Original price was: 100 ৳ .70 ৳ Current price is: 70 ৳ .
লেখক | ইমাম ইবনে কাইয়্যিম জাওজিয়্যা রহ., ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ, ইমাম গাযযালী রহ. |
---|---|
অনুবাদক | আহমেদ ইউসুফ শরীফ, জাকারিয়া মাসুদ |
প্রকাশনা | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ৬৪ |
বাধাঁই | পেপার ব্যাক |
ভাষা | বাংলা |
ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ.
নাম, উপাধি ও বংশপরিচয় হাফিয আবুল ফারাজ ইবনু রজব হাম্বলি। তিনি ছিলেন একজন ইমাম ও হাফিয। তাঁর পুরো নাম যাইনুদ্দিন আবদুর রহমান ইবনু আহমাদ ইবনু আব্দুর রহমান ইবনুল হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবিল বারাকাত মাসউদ আস-সুলামি আল-বাগদাদি আদ-দামিশকি আল-হাম্বলি। তাঁর অন্য নাম আবুল ফারাজ এবং ডাকনাম ইবনু রজব। এটা তাঁর দাদারও ডাকনাম ছিল। তাঁর দাদা রজব মাসে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর দাদার ডাকনামও ইবনু রজব ছিল। জন্ম তিনি ৭৩৬ হিজরিতে বাগদাদের একটি ইলমসম্পন্ন ও পরহেজগার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন তিনি তাঁর সময়ের সবচেয়ে প্রাজ্ঞ আলিমদের নিকট হতে ইলম শিক্ষা করেন। তিনি ইবনু কায়্যিমিল জাওযিয়্যাহ, যাইনুদ্দিন আল-ইরাকি, ইবনুন নাকিব, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল আল-খাব্বাজ, দাউদ ইবনু ইবরাহিম আল-আত্তার, ইবনু কাতি আল-জাবাল এবং আহমাদ ইবনু আবদুল হাদি আল-হাম্বলি s প্রমুখ আলিমদের তত্ত্বাবধানে দামেশকে জ্ঞানার্জন করেন। তিনি মক্কায় আল-ফাখর উসমান ইবনু ইউসুফ আন-নুওয়াইরি, জেরুজালেমে হাফিয আল-আলাঈ এবং মিসরে সদরুদ্দিন আবুল ফাতহ আল-মায়দুমি এবং নাসিরুদ্দিন ইবনুল মুলুকের কাছ থেকে হাদিস শ্রবণ করেন। তাঁর ছাত্রবৃন্দ অনেক তালিবুল ইলম তাঁর কাছ এসে দীনের জ্ঞান অর্জন করতেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকজন ছিলেন : আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু আবু বকর ইবনু আলি আল-হাম্বলি, আবুল ফাদল আহমাদ ইবনু নাসর ইবনু আহমাদ, দাউদ ইবনু সুলাইমান আল-মাউসিলি, আবদুর রহমান ইবনু আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মুকরি, যাইনুদ্দিন আবদুর রহমান ইবনু সুলাইমান ইবনু আবুল কারাম, আবু যর আল-যারকাশি, আল-কাযি আলাউদ্দিন ইবনুল লাহাম আল-বালি এবং আহমাদ ইবনু সাইফুদ্দিন আল-হামাউই s প্রমুখ। মনীষীদের চোখে ইবনু রজব ইবনু রজব r ইলমের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই গবেষণা, লেখালেখি, গ্রন্থ প্রণয়ন, শিক্ষকতা এবং ফতোয়া প্রদানের কাজে ব্যয় করেন। ইবনু রজবের পাণ্ডিত্য, সাধনা এবং ফিকহে হাম্বলির ওপর অসামান্য ব্যুৎপত্তি থাকার কারণে আলিমসমাজ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ইবনু কাযি শুহবাহ r তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পড়াশোনা করে ব্যাপক ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন। তিনি মাযহাবের বিষয়সমূহ পুরোপুরি আয়ত্ত করার পূর্ব পর্যন্ত তাতে নিবিষ্ট ছিলেন। তিনি হাদীসে নববীর সনদ-মতন, তাহকিক ও ব্যাখ্যার কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’ ইবনু হাজার আল-আসকালানি r তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি অনেক উঁচু পর্যায়ের হাদিস-বিশারদ ছিলেন। উসুলুল হাদিস, রিজালশাস্ত্র তথা রাবিদের নাম ও জীবনবৃত্তান্ত, হাদিসের সনদ-মতন এবং হাদিসের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যায় পারদর্শী ছিলেন।’ ইবনু মুফলিহ r তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি ছিলেন শায়খ, প্রাজ্ঞ আলিম, হাফিয, দুনিয়াবিমুখ এবং হাম্বলি মাযহাবের একজন প্রসিদ্ধ ইমাম। তিনি বহু জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন।’রচনাবলি তিনি বহুসংখ্যক কালজয়ী গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে, ‘আল-কাওয়াইদ আল-কুবরা ফিল ফুরু’। এ গ্রন্থ সম্পর্কে বলা হয় যে, ‘গ্রন্থটি এ যুগের অন্যতম বিস্ময়।’ তাঁর তিরমিযি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থকে সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলা হয়। তিরমিযি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে তাঁর লেখনী এত সমৃদ্ধ ছিল যে, আল-ইরাকি রাহ. তিরমিযি শরিফের নিজ ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণয়নের সময় তাঁর সহায়তা নিতেন। ইবনু হাজার আল-আসকালানি r যার সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি ছিলেন তাঁর যুগের বিস্ময়।’ উপরন্তু তিনি বিভিন্ন হাদিসের ব্যাখ্যায় অনেক মূল্যবান শরাহ রচনা করেছেন। যেমন : ‘শারহু হাদিস মা যিবানি যাঈআন উরসিলা ফি গানাম’, ‘ইখতিয়ার আল-আওলা শারহু হাদিস ইখতিসাম আল-মালা আল-আলা’, ‘নুরুল ইকতিবাস ফি শারহু ওয়াসিয়্যাহ আন-নাবিয়্যিল ইবনু আব্বাস’ এবং ‘কাশফুল কুরবাহ ফি ওয়াসফি আহলিল গুরবাহ’। তাফসীরশাস্ত্রে তাঁর অবদানসমূহের মধ্যে রয়েছে : ‘তাফসীরু সূরা ইখলাস’, ‘তাফসীরু সূরা ফাতিহা’, ‘তাফসীরু সূরা নাসর’ এবং ‘আল-ইস্তিগনা বিল কুরআন’। হাদিসশাস্ত্রে তাঁর রচনাবলির মধ্যে : ‘শারহু ইলালিত তিরমিযি’, ‘ফাতহুল বারী শারহুস সহিহ আল-বুখারি’ এবং ‘জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম’ অন্যতম। ফিকহশাস্ত্রে তাঁর রচনাবলির মধ্যে রয়েছে : ‘আল-ইস্তিখরাজ ফি আহকামিল খারাজ’ এবং ‘আল-কাওয়াইদ আল-ফিকহিয়্যাহ’। জীবনীগ্রন্থসমূহের মধ্যে বিস্ময়কর গ্রন্থ ‘যাইল আলা তাবাকাতিল হানাবিলাহ’। তাঁর নসিহাহমূলক গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে : ‘লাতাইফুল মাআরিফ’ এবং ‘আত-তাখওয়ীফ মিনান্নার’।মৃত্যু তিনি ৭৯৫ হিজরির রমযান মাসের ৪ তারিখ সোমবার রাতে দামেশকের আল-হুমারিয়্যাহ এ মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম গাযযালী রহ.
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।
Related products
ইবনে কাছির (রহঃ) ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ.
Reviews
There are no reviews yet.