আমার টেবিলের আশপাশে; বিছানায়, শিথানের পাশে গোটা দশেক বই শুয়ে-বসে আধ খোলা হয়ে হর-হামেশাই গড়াগড়ি খায়, লোকে আসে-বসে; দুই একটা বই নিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করে, গোটা কয়েক পৃষ্ঠা উল্টোয় আবার আপনা জায়গায় রেখে দেয়— কিন্তু বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই, এই বইটার সঙ্গে যা ঘটলো তা আর কখনোই আমার কোনো বইয়ের সঙ্গে ঘটে নাই। গল্পটা তাইলে বলেই ফেলি। হপ্তাখানেক আগে, বাংলাবাজার যাই কোনো এক প্রয়োজনে। মাকতাবাতুল আমজাদ— ‘চেতনা’ শিরোনামে যার বাংলা প্রকাশনা, তার সামনেই দেখা পাই উস্তাজ Manzur Ahmad সাহেবের। হুজুর বসালেন স্নেহ করে, চা-সমুচা দিয়ে সান্ধ্য আপ্যায়নও করলেন, এরপর ‘চেতনা’ থেকে সদ্য প্রকাশিত তিন-তিনটে বই হাতে দিয়ে বললেন— ভালো লাগলে রিভিউ লি’খো। মনে মনে ভাবলাম চেল-চটচটে, জবরদস্ত টাইপের একখানা রিভিউ লিখে হাদিয়ার দরজাটা হামেশার জন্য খোলা রাখা চাই। কিন্তু সেই রিভিউ লেখার সময়টা আর পেলাম কই? এখন ভাবছি, রিভিউ আর কি লিখবো, গল্পটাই লিখে ফেলি। বইটা রুমে এনে টেবিলের উপর রেখেছি।
আধখোলা ছিল। আলী ভাই এসে পড়া শুরু করলেন। পড়ছেন তো পড়ছেন, ছাড়ার নাম নেই। সহসাই বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে বললেন, ভাই, বইটা কোত্থেকে কিনেছেন?
বললাম— কেনো?
বললেন— আমার লাগবে বইটা, খুব ভালো লাগছে, অনেক কিছু জানলাম, এমন বই আগে কখনো পাই নাই ভাই, বইটা আমার বউরে পড়তে দিব, আমি আপনাকে টাকা দিয়ে দিই, আপনি আরেকটা কিনে নেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে উনি বই নিয়ে চলে গেলেন। আমি কিছু বলার সুযোগটাও পেলাম না। যাইহোক, এরপর আবার যখন বাংলাবাজার গেলাম, সেই টাকা দিয়ে বইটার আরেকটা কপি নিয়ে এলাম। কিন্তু কী আজিব কীর্তি বলেন তো? এইবারও সেই একই ঘটনা ঘটলো। আজকে ফজলু ভাই রুমে এসে টেবিলের উপর থেকে বইটা নিয়ে পড়া শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পড়ার পর ওনারও সেই একই হাল।
বললেন, ভাই এই বইটা কই পাওয়া যাবে?
বললাম, বাংলাবাজার, কেনো?
বললো, ভাই, আপনি কি বাংলাবাজার যাবেন? গেলে আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি, আপনি একটা কিনা নিয়েন। আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে আমি অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি, অনেক সমস্যার সমাধান পেয়েছি। আমি আরও দশ কপি কিনে পরিচিতদের হাদিয়া দিব। আমি তো ওনার কথা শুনে পুরাই তব্দা!
প্রথম ঘটনাটা না হয় কাকতালীয়, একই ঘটনা দ্বিতীয়বার? বইটা এতদিনে শেষ না করে মস্ত ভুল করেছি। আবার বাংলাবাজার কবে যাবো, সেই অপেক্ষা। আশা করি উপরের ঘটনা দুটিই বইটার পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারপরও যদি অল্প কথায় এর পরিচয় দিতে চাই, তাহলে আল্লামা ইকবালের একটা কবিতার দুটি লাইন বলতে হয়। ইকবাল বলেন— খুদী কো কার বুলান্দ ইতনা কে হার তাকদীর সে পেহলে, / খোদা বান্দে ছে খুদ পুছে বাতা তেরি মারজি কেয়া হ্যায়। ‘আত্মপোলব্ধিকে করো এতটাই সুউচ্চ যে, প্রত্যেকবার তাকদির লেখার আগে আল্লাহ স্বয়ং বান্দাকে তার মর্জি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে নেন। সৌভাগ্যের মরিচিকার পেছনে কাকতাড়ুয়ার মতো ছুটন্ত মানুষদের আবে হায়াতের সন্ধানই যেন দিয়ে দিলেন ইকবাল। সৌভাগ্যের দুয়ার সবার জন্য সর্বাদাই খোলা, কিন্তু মক্কার পথিক তুর্কিস্তানের দিকে পথ চললে তো আর পথ ফুরোবে না। যদি বলি ইকবালের এই কাব্যের মর্ম বুঝতে হলে এবং খুঁজতে হলে এই বইয়ে ডুব দিতে হবে, তাহলে হয়তো ভুল হবে না।
সৌভাগ্যের দুয়ার
লেখক : ড. আয়েয আল কারনী
প্রকাশক : চেতনা প্রকাশন
বিষয় : অন্ধকার থেকে আলোতে
200 ৳ Original price was: 200 ৳ .120 ৳ Current price is: 120 ৳ .
বই | সৌভাগ্যের দুয়ার |
---|---|
লেখক | |
অনুবাদ | |
প্রকাশক | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 128 |
বাঁধাই | হার্ডকভার |
সংস্করণ | ১ম সংস্করণ,২০২০ |
ভাষা | বাংলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
Related products
-31%
মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
-30%
মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
Reviews
There are no reviews yet.