আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাদের জীবন বড় বৈচিত্র্যময়। আল্লাহ তাআলা এই মানুষগুলোর হৃদয় এতো স্বচ্ছ ও সফেদ বানিয়েছেন যে সাহাবাদের যাপিত জীবনের বাঁকে বাঁকে উম্মাহর জন্য রয়েছে আদর্শ ও চিন্তার খোরাক। সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুমের ব্যাপারে আহলে সুন্নাহর বিশ্বাস হলো, তাঁরা মাসুম ছিলেন না, তবে তাদের কারো থেকে গুনাহ প্রকাশ পেয়ে গেলে অবশ্যই মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তাকে তাওবার তাওফিক দিয়েছেন। প্রবৃত্তির প্ররোচনায় কখনো গুনাহ করে ফেললে কিংবা সাময়িক পথ হারিয়ে ফেললে, রবের পথে প্রত্যাবর্তনের যে আকুলতা তাদের অস্থির করে তুলতো–এটা অন্যদের জন্য আদর্শ। অপরাধের এই সরল স্বীকারোক্তি থেকে আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু। তদ্রুপ, সাহাবাদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও আত্মীয়তার ভিত্তিও ছিলো দীনের ওপর। আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশের সামনে নিজেদের বন্ধুত্ব, সম্পর্ক সবকিছুকে পরিত্যাগ করতে তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হতেন না।
বক্ষ্যমাণ বইয়ে তিনজন সাহাবীর তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহন না করা ও পরবর্তী তাদের কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি অত্যন্ত সরলভাবে আলোচিত হয়েছে। একটি মাত্র হাদিস। অথচ এর শব্দে শব্দে কতো শিক্ষা ছড়িয়ে আছে। এই শিক্ষা নিজের মধ্যে লুকানো নিফাকি যাচাই করার। এই শিক্ষা নবীযুগের সাথে আমাদের সমাজকে মিলিয়ে দেখার। সর্বোপরি নিজেদের ফিরে পাবার। আল্লাহ আমাদের এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
Muwahhid Muhammad Abdullah –
ছোট, আন্ডাররেটেড কিন্তু অসাধারণ এক বই। শব্দতরী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত।
প্রেক্ষাপটঃ ৯ম হিজরী সনের রজব মাসে রাসূলুল্লাহ (স) স্বীয় নববী জীবনের সর্ববৃহৎ সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে তাবুক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা দেন। প্রায় ৩০ হাজার সাহাবীর এ বাহিনীতে মুনাফিকরা যোগ দিতে পারেনি। অভিয়ান ছিল তীব্র গরমে, প্রতিপক্ষ ছিল মহা প্রতাপশালী রোমানরা। তাই মুনাফিকরা নানা মিথ্যা বাহানায় যুদ্ধ যাত্রা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
যুদ্ধ থেকে পিছনে থেকে যান তিনজন সত্যবাদী সাহাবীগণও। আলসেমি ও হেলা করে নফসের ধোকায় তারা পিছনে পড়ে যান। এদের মধ্যে কাব (রা) একজন। নবীজি (স) যুদ্ধ শেষে ফিরে আসলে তারা মিথ্যা বাহানা না করে সত্য কথা খুলে বলেন। ফলে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। একটা সময় তাদের তাওবাহ কবুল হয়।
সম্পূর্ণ ঘটনা কা’ব (রা) এক দীর্ঘ হাদিসে ব্যক্ত করেছেন। এই বইটি সেই হাদিস থেকে শিক্ষা।
বইটি যেকারণে অসাধারণঃ
১। অসাধারণ লেখনী। শাইখ আবু হামজা সেই হাদিসটি থেকে অনেকগুলো উপকারী শিক্ষা তুলে এনেছেন। সত্যি এর আগে হাদিসটি নিয়ে এভাবে ভাবিনি।
২৷ উপশিরোনাম। বইয়ের উপশিরোনামগুলো অত্যন্ত শিক্ষণীয়। সম্পূর্ণ বই পড়ার পর উপশিরোনামগুলো পড়লেও রিভাইস হয়ে যায়।
৩। কলেবর ছোট ও পকেট সাইজের, কিন্তু পড়তে সময় লেগেছে। কারণ, শিক্ষাগুলো ছিল জীবনঘনিষ্ট, উম্মাহর জন্য জরুরি।
৪। অনুবাদ দারুণ হয়েছে।
বইয়ের খামতিঃ হাদিসটির অনুবাদ যদি বইয়ের শুরুতে তুলে দেয়া হত এবং সংক্ষেপে অল্পকথায় প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হত, তাহলে যেসব পাঠক ঘটনাটা জানেন না বা সীরাত পড়েননি বা হাদিসটি জানেন না, তাদের জন্য সুবিধা হত।